ফেসবুক বন্ধ - সমর্থনে আমার ব্যক্তিগত মতামত এবং এক প্রপাগান্ডার ডাস্টবিন।
ফেসবুক বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। নিরাপত্তার স্বার্থে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ ঘোষনা করা হয় তখন তা দুইটা জিনিস প্রমান করে। এক, দেশের আইন শৃংখলা বাহিনী এখনও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে নাই।
দুই, দেশের অনেক মানুষ এখনও ফেসবুক ব্যবহারের মানসিক যোগ্যতা অর্জন করে নাই।
বিশ্লেষনঃ
অনেকেই বলবেন পুলিশের কথা বাদ দেন, পুলিশ পারে না, পুলিশ করছে না বাট বিশ্বাস করেন কাছ থেকে পুলিশের কার্যক্রম দেখার সুযোগ হয়েছে। তারা দক্ষ জনবল , সীমিত সম্পদ নিয়েও তারা কাজ করছেন। তবে সমস্যা হচ্ছে ক্ষেত্র বিশেষে রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন পুলিশের সকল চেষ্টায় জল ঢেলে দিচ্ছে। আপনি পুলিশকে প্রভাব মুক্ত করেন। ১ মাসের মধ্যে পুলিশ সব ঠিক করে ফেলার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারে এটা পুলিশ পারছে না। ফলে তারা হারাচ্ছে মোরালিটি ও ইন্সপারেশন। সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে যেভাবে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে এবং ধর্মকে ব্যবহার করে উম্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে সেটা খুব বিপদজনক পরিনতির দিকেই যাচ্ছিলো।
ফেসবুক একটা উন্মুক্ত মাধ্যম। এখানে একজনের পাবলিক মতামতগুলো ক্ষেত্র বিশেষে অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। যিনি রাজনীতির অ ও বুঝেন না, তিনিও বিশাল বিশাল বক্তব্য দেন হাসিনা খালেদার কি করা দরকার। আবার গত বছর তো একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা পুরো সময় ফেসবুকেই আন্দোলন করে কাটাইলো। মরল গিয়ে সাধারন নেতাকর্মীরা। সে বাদ দেন, আমার এলাকার সেলুনের লোকটার ফেসবুক একাউন্ট আছে, আমার অফিসের পিয়নের ফেসবুক একাউন্ট আছে। এমন না যে তারা জামাত শিবির সমর্থন করে, বা ব্লগ সম্পর্কে কোন ধারনা রাখে, বা পলেটিক্স সম্পর্কেও কোন বাস্তব ধারনা রাখে। এরা আমাকে এ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলো। আমি কৌতুহল নিয়ে তাদের পেইজে ঘুরতে দেখিছি তারা দুনিয়ার সব নাখাস্তা চটি ও ধর্মীয় পেইজে লাইক দিয়ে রেখেছে। একই সাথে এরা দুই ধরনের পোস্টই লাইক ও শেয়ার করছে। এরা না বুঝে শেয়ার করছে ব্লগার মানেই নাস্তিক, ইত্যাদি বিভিন্ন জাল হাদিস যেমন স্বামীর পায়ের তলে স্ত্রীর বেহেসত, ছোট খাটো হাদিস যা শেয়ার করলে আপনার মনের ইচ্ছা পূর্ন হবে টাইপের লেখা। মেয়েদের সম্পর্কে এদের মন্তব্য ও চিন্তাধারা অত্যন্ত অশালীন। উনারা সব কিছু লাইক দেন, বুঝে না বুঝে লাইক দেন।
আমার ফেসবুকে ইংরেজীতে দেয়া ৫/৬ টি স্ট্যাটাসে তাদের লাইক দেখলাম, যা তাদের বিন্দুমাত্র বুঝার কথা না। বিভিন্ন পরিচিত কয়েজনক ফেসবুক সেলিব্রেটির একাউন্টেও এদের লাইক দেখেছি। এরা সবাইকে গনহারে ফলো করে। আর কোন ছবিতে বা কোন স্ট্যাটাসে যদি নাস্তিক, সরকারের দালাল, দাজ্জাল জাতীয় শব্দ থাকে, সেখানে সাথে সাথে লাইক ও শেয়ার। ধর্ম ভেদে যার যার ক্যাটাগরীর যেমন হাদিস বা হিন্দু ধর্মের কোন কোটেশন এরা নিজ নিজ ওয়ালে শেয়ার করে। দুনিয়ার আজগুবি সব বিষয়ে এদের বিশ্বাস। যেমন একটা ছবি দেখলাম ফটোশপ দিয়ে বানানো হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে দুইজন পাইলট যুদ্ধ বিমানের ডানায় বসে ইফতার করছেন। আমার সাবেক অফিসের পিয়ন শেয়ার দিয়ে বলেছে 'subanlla seyar kara'
আবার দেখলাম কোন একটা চটি পেইজে কোন এক মেয়ের ছবি ফেইকভাবে আপলোড করছে, যেখানে মেয়ে লিখছে তারে মিসকল দেয়া হোক, সে কলব্যাক করবে। সে তা শেয়ার করে, নিজের নাম্বার দিয়া আসছে। আমি খুব আতংকিত ফিল করি যখন দেখি এরা বিভিন্ন অশ্লীল ছবিতে লাইক দিচ্ছেন আবার ধর্মীয় প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন। আর এদের এই মানসিক ও শিক্ষার দুর্বলতাকে পুঁজি করেই শিক্ষিত একটি অংশ যারা রাজনৈতিকভাবে কোন একটি দলের সাথে সম্পৃক্ত তারা এই মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রপাগান্ডা তৈরী করছেন। সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা। তাছাড়া এই দেশের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় প্রপাগান্ডা ছড়ানো খুব সহজ কারন,
ক) আমাদের দেশের মানুষ খুবই ধর্মভীরু
খ) আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান খুবই কম।
গ) আমাদের দেশের মানুষ জাতিগতভাবে কিছুটা দুর্নীতিপ্রবন। এরা মনে করেন সারাজীবন যতই দুই নাম্বার উপায়ে টাকা কামাক না কেন, শেষ জীবনে একটা মাদ্রাসা, মসজিদ বা ধর্মীয় অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছু টাকা দান করে পূন্য কামানো যাবে। এই কারনেই লক্ষ্য করে দেখবেন, বড় বড় ক্ষমতাশীনরাই সাধারনত মসজিদ বা মন্দিরের সভাপতি বা সদস্য হোন। আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবেসে খুব কম মানুষই এই সব কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। ফলে যখনই ধর্মীয় কোন পূন্য কামাবার সহজ উপায় তারা পান, সেটার সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই তা তারা লুফে নেন। এই আচরনের প্রভাব পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
ফলে অল্প শিক্ষিত মানুষরা যখন এই জাতীয় কিছু দেখে তখন তাদের ঈমানী জোস বা ধর্মীয় আদর্শ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। তারা নিজেদের অলক্ষ্যেই জড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর ধর্মীয়-রাজনৈতিক প্রপাগান্ডায়। যেমন রামুতে হামলা এবং রাজাকার খ্যাত দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে চাঁদে দেখার বিষয়টি। আফসোস হচ্ছে, এই দেশে মানুষ আযান শুনলে মসজিদে যেতে দ্বিধা করলেও, নায়েরে তকবীর শুনলে জিহাদী জোসে লাফালাফি শুরু করে।
এনিওয়ে, অনেকেই বলতে শুনি আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখনও ফেসবুক ব্যবহার করার উপযুক্ত নয়। আমিও তাই মনে করি। আগে দেশে শিক্ষার মান বাড়ান, মানুষের মনে সত্যিকার জ্ঞানের আলো জ্বলুক, রাজনৈতিক অস্থিরতা কমুক। মানুষ সচেতন হোক, তারপর ফেসবুক ওপেন করা হোক। এটা মন্দের ভালো। তাই ফেসবুক বন্ধকে আপাতত আমি সমর্থনই করছি। তরুন প্রজন্মের উচিত সেলফি মেনিয়া থেকে মুক্ত হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়া। নিজেকে প্রস্তুত করা।
ফেসবুক বন্ধ - সমর্থনে আমার ব্যক্তিগত মতামত এবং এক প্রপাগান্ডার ডাস্টবিন।
Reviewed by Ab Mamun
on
November 20, 2015
Rating:
Reviewed by Ab Mamun
on
November 20, 2015
Rating:

No comments
আপনার একটি মন্তব্য একজন লেখক/লেখিকা কে ভালো কিছু লিখার অনুপ্ররেনা যোগায় তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত জানাতে ভুলবেন না । তবে ভাই ও বন্ধুরা এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করবেন না যার ফলে লেখক/লেখিকার মনে আঘাত করে ! কারণ একটি ভাল মন্তব্য আমাদের কে আরও ভাল কিছু লিখার অনুপ্রেরনা যোগাতে সাহায্য করে থাকে !!
ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য। । ।