বিপিএলে চার–ছক্কা গেল কই!
‘চার-ছক্কা হই হই, বল গড়াইয়া গেল কই!’ ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম সংয়ে উঠে এসেছিল টি-টোয়েন্টির মূল চেতনাটাই। ব্যাটে বলের লড়াইয়ে জিতবে একটি দল কিন্তু মাঠে রান বন্যা বইয়ে দেবে দুই দলই। চার ছক্কার ফুলঝুরিতে চোখে সরষে দেখবেন বোলাররা। কিন্তু এবারের বিপিএলের থিম সং যেন, ‘হইহই রইরই, চার-ছক্কা গেল কই!’
টি-টোয়েন্টি মানে চার-ছক্কার মারকাটারি ক্রিকেট। এখানে বোলাররা যেন ঘরের সৎছেলে। ভারী ব্যাট, ব্যাটিংবান্ধব পিচ, ছোট সীমানা আর ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসী মূর্তির কাছে অসহায় হয়ে থাকেন বোলাররা। এমনকি দর্শকেরাও মাঠে আসেন রান বন্যা দেখতে। কিন্তু এবারের বিপিএল যেন পুরো উল্টো সুর বাজাচ্ছে। মারকাটারি টি-টোয়েন্টিতে রান তোলাই যেন কষ্ট সাধ্য এক কাজে পরিণত হয়েছে। চার ছক্কার দেখাও মিলছে কম।
ঢাকা পর্ব শেষ হয়ে গেছে শুক্রবার। ইতিমধ্যে ১২টি ম্যাচ হয়ে গেছে। এই ১২ খেলায় সর্বমোট ৩১৪৭ রান হয়েছে, অর্থাৎ ম্যাচ প্রতি ২৬২.২৫ রান। ইনিংস প্রতি ১৩১ রানের একটু বেশি। এর চেয়েও বড় বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে ওভার প্রতি রানের পরিসংখ্যান। প্রথম ১২ ম্যাচে ওভারপ্রতি রান উঠেছে মাত্র ৬.৮৩! ওভারপ্রতি সাতের চেয়েও কম রান নেওয়াটা টি-টোয়েন্টিতে শুধু বিস্ময়করই নয়, হতাশাজনকও বটে।
এরপরই আসছে চার ছক্কার হিসেব। টেস্ট বা ওয়ানডেতে দর্শক মাঠে আসেন ব্যাট-বলের লড়াই দেখতে, কিন্তু টি-টোয়েন্টির প্রবল জনপ্রিয়তার পেছনের কারণ কিন্তু চার ছক্কার বন্যা। টি-টোয়েন্টি মানেই, উৎসবের মেজাজে ক্রিকেট দেখবে সবাই আর একটু পর পর ব্যাটসম্যানদের হাঁকানো বল গ্যালারিতে উড়ে এসে সেই উৎসবে লাগাবে বাড়তি রং। আর এখানেই বিপিএলের তৃতীয় আসর অনেকটাই ব্যর্থ। এখন পর্যন্ত বিপিএল ২৭৯টি চারের মার দেখেছে আর ছক্কার সংখ্যায় তো একেবারেই গরিব হাল, ৮৮টি! প্রথম বিপিএলে চার ছিল ৮২০টি, ছক্কা ২৫৭টি। আর দ্বিতীয় বিপিএলে চারের সংখ্যা তো হাজারই ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেবার ১১৮১টি চার মেরেছিলেন ব্যাটসম্যানরা, ছক্কা ৪৪১টি।
এবারের বিপিএলে এখনো ২২টি ম্যাচ বাকি আছে। তাই চার-ছক্কার সংখ্যা যে বাড়বে এতে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু ম্যাচ প্রতি চার ছক্কার হিসেব টানলেও দেখা যাচ্ছে আগের দুই আসর থেকে পিছিয়ে আছে এবারের টুর্নামেন্ট। ২০১২ সালের প্রথম আসরে ম্যাচ প্রতি ২৪.৮৫টি চার ও ১০.৮১টি ছক্কার দেখা মিলেছিল। দ্বিতীয় আসরে চারের পরিমাণ টা একটু বেড়েছিল ২৫.১৩, তবে কমেছিল ছক্কার সংখ্যা, ৯.৩৮। আর এবারের আসরে ম্যাচ প্রতি চারের সংখ্যা ২৩.২৫ আর ছক্কা মাত্র ৭.৩৩টি!
অথচ টুর্নামেন্টের শুরুটা কিন্তু দিচ্ছিল ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত। প্রথম পাঁচ ম্যাচেই ১৪৪টি চার ও ৫৮টি ছক্কা দেখে ফেলে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম। কিন্তু এরপরই যেন ছন্দ কেটে যায় ব্যাটসম্যানদের। চার-ছক্কার দেখা মিলছে কম। ধুমধাড়াক্কা, মারকাটারি ক্রিকেট রূপ নিয়েছে ঘুমপাড়ানি ক্রিকেটে। এর পেছনে টানা ৬ দিন ধরে দুটি করে ম্যাচ খেলাকেই কারণ মানছেন অনেকে। মাত্র তিনটি পিচে ১২টি ম্যাচ খেলার ফলে পিচ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। রান নেওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নামে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে অবশ্য এভাবেই খেলা চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এতে যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আসল মজাটাই হারিয়ে যাচ্ছে, সেদিকেও বোধ হয় নজর দেওয়াটা দরকার। না হলে দুই বছর বিরতি দিয়ে শুরু হওয়া বিপিএলটা মলিন হয়ে পড়বে।
Reviewed by Ab Mamun
on
November 29, 2015
Rating:

No comments
আপনার একটি মন্তব্য একজন লেখক/লেখিকা কে ভালো কিছু লিখার অনুপ্ররেনা যোগায় তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত জানাতে ভুলবেন না । তবে ভাই ও বন্ধুরা এমন কোন মন্তব্য পোস্ট করবেন না যার ফলে লেখক/লেখিকার মনে আঘাত করে ! কারণ একটি ভাল মন্তব্য আমাদের কে আরও ভাল কিছু লিখার অনুপ্রেরনা যোগাতে সাহায্য করে থাকে !!
ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য। । ।